শাইখুল হাদীস মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
হামদ ও সালাতের পর…
ঈমান-আমল ঠিক করলে আসমান-যমীনের বরকতের দরজা খুলে যাবে
মুহতারাম হাযেরীন! আমরা যদি সর্বমহলে ও সর্বস্তরে আল্লাহ তা‘আলার হুকুম ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত চালু করতে পারি তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমীনের বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিবেন। দেশে হিরা-মণি-মুক্তার খনি চালু করে দিবেন। আমাদের কোনো রকম অভাব-অনটন থাকবে না। দেখুন না, আফগানিস্তানের ভাইয়েরা এখন খুব বরকত লাভ করছে। ইসলামী হুকুম-আহকাম জারি করার পর সেখানে এমন সব মূল্যবান খনিজ সম্পদ আবিষ্কৃত হচ্ছে, যার সন্ধান আগে পাওয়া যায়নি। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বিষয়টিকে এভাবে বলেছেন
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ
অর্থ: যদি জনপদবাসী ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও যমীন থেকে কল্যাণধারা অবমুক্ত করে দিতাম। (সূরা আরাফ-৯৬)
অর্থাৎ জগতবাসী যদি ঈমান-আমল ঠিক করে এবং আল্লাহর হুকুম ও নবীজীর তরীকা অনুযায়ী চলে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতের দরজাগুলো খুলে দিবেন। কিয়ামতের পূর্বে যখন ইমাম মাহদী আগমন করবেন তখন সেই বরকত আরও পরিপূর্ণরূপে দেখা যাবে। ঈমান-আমল ঠিক করলে এখনও বরকত পাওয়া যাবে; তবে ইমাম মাহদীর আগমনের পর আরও অধিক পরিমাণে পাওয়া যাবে। সে সময়ের বরকত বোঝানোর জন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে যে, একটা বকরী এ পরিমাণ দুধ দিবে, যা একটা বড় পরিবারের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। আরো বলা হয়েছে, একটা ডালিম যদি মাঝ বরাবর কেটে দানাগুলো বের করে নেওয়া হয় তাহলে ডালিমটির খোসার দুইভাগ দু’টো ছাতার মত হবে। এর একেকটা ছাতার নিচে বৃষ্টির সময় দশজন মানুষ দাঁড়াতে পারবে। অর্থাৎ দুই ছাতায় মোট বিশজন দাঁড়াতে পারবে। তাহলে ডালিমটা কত বড় হবে! একেই বলে আল্লাহ তা‘আলার বরকত। কাজেই আমরা যদি দীন কায়েম করতে পারি এবং প্রত্যেক এলাকার লোকজন আল্লাহওয়ালা হয়ে যাই তাহলে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেও আমাদেরকে শান্তি-সমৃদ্ধি দান করবেন। অনেকের ধারণা, ইসলামী হুকুম-আহকাম অনুযায়ী জীবন যাপন করলে শুধু পরকালে শান্তি মিলবে; দুনিয়াতে নয়। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। ইসলাম অনুযায়ী চললে পরকালে তো শান্তি মিলবেই; দুনিয়াতেও শান্তি লাভ হবে। উদাহরণত, আমেরিকা যদি বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে সেদেশে যাওয়ার দাওয়াত দেয় তাহলে সে আমেরিকায় গিয়েই সম্মান পাবে তা নয়; বরং বাংলাদেশ থেকেই তার সম্মান-মর্যাদা শুরু হয়ে যাবে। পাসপোর্ট অফিস, ভিসা অফিস সব জায়গায় সম্মানের সাথে দ্রুতগতিতে কাজ সমাধা হবে। কেনো? কারণ আমেরিকা দাওয়াত দিয়েছে। আমেরিকা কাউকে দাওয়াত দিলে যদি বাংলাদেশ থেকেই তার শান্তি-সম্মান শুরু হয়ে যায়, তাহলে যে ব্যক্তি আখেরাতে শান্তি-সুখে থাকবে দুনিয়ায় থাকতেই তার শান্তি-সমৃদ্ধি শুরু হবে না? অবশ্যই হবে।
গণতান্ত্রিক ধারায় দেশে শান্তির আশা করা ভুল!
আমরা অনেকে আশা করছি, নতুন সরকার আসবে, তারা সোনার বাংলা গড়বে, আর দেশে শান্তি ফিরে আসবে। এগুলো নিছক দুরাশা। জনসাধারণ তো জনসাধারণ, বর্তমান পরিস্থিতি দেখে কিছু আলেমও খুশিতে গদগদ হচ্ছেন। তাদের খুশি দেখে মনে হচ্ছে, তারা যেন এমপি-মন্ত্রী বনে গেছেন। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে ইনসাফের সাথে বলুন! কোনো আলেম যদি এই গণতান্ত্রিক সংসদের সদস্য হয় তাহলে সে কী করতে পারবে? সে কি সংসদে কুরআন-সুন্নাহর আইন পাস করতে পারবে? চোরের হাত কাটার নির্দেশ দিতে পারবে? যিনা-ব্যভিচারের শাস্তি বাস্তবায়ন করতে পারবে? পারবে না। বর্তমান সংবিধানে তো এসব আইন নেই। তাহলে গণতন্ত্র দ্বারা গঠিত পার্লামেন্টে আলেমরা গেলেও তারা কী কাজটা করতে পারবে? অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলছিÑ আর কিছু পারুক, না-পারুক, তারা মন্দিরে-মন্দিরে গিয়ে পূজারী ও ঠাকুরদের জন্য দু‘আ করতে পারবে। ক’দিন আগে ধর্ম উপদেষ্টার বয়ান শুনলাম যে, তিনি পূজারীদেরকে বলছেন, ‘আপনারা পূজার সময় যদি সহযোগিতা চান তাহলে আমি মাদরাসার ছাত্রদের পাঠাব। তারা আপনাদেরকে নিরাপত্তা দিবে।’ বলুন! মূর্তির নিরাপত্তা দেওয়া কি মাদরাসার ছাত্রদের কাজ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি দুনিয়াতে এসেছি মূর্তি ও বাদ্যযন্ত্র ভাঙ্গার জন্য।’ তাহলে মাদরাসার ছাত্ররা কীভাবে মূর্তি পাহারা দিবে? ধর্ম উপদেষ্টা তো একজন আলেম। তাকে সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ইসলামী আদর্শ ও ভাবধারার বিপরীত কথা বলছেন। তাহলে একজন আলেমকে পদায়ন করে কী লাভ হলো? শুধু তিনিই নন, আমাকেও যদি আপনারা ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানিয়ে দেন তাহলেও ইসলামের কোনো ফায়দা হবে না। কেননা আমি তখন গণতন্ত্রের আইনে বন্দী থাকব। গণতন্ত্রের আইনে নেতা ও সংবিধান যা বলেÑ ভুল হোক শুদ্ধ হোকÑ সবারই সেটা মানতে হয়। এমপি বা মন্ত্রীদেরও সেখানে স্বাধীনতা নেই। নেতা কী বলে, সংবিধান কী বলে তারা সেদিকে তাকিয়ে থাকে। কাজেই মানুষ যে বলে, অমুক সরকার জনগণের সরকার; বর্তমানে এর কোনো বাস্তবতা নেই! যেখানে এমপিরা কথা বলতে পারে না সেখানে জনগণ কী করবে? ওদিকে নেতারও কোনো স্বাধীনতা নেই। তার কাছে কোন্ দেশ থেকে কোন্ নির্দেশনা আসবে, তাকে সেটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় বিদেশী রাষ্ট্রগুলো তাকে সমর্থন করবে না। তাহলে নেতারই স্বাধীনতা রইল কোথায়? যে প্রধানমন্ত্রী হয় তারও কিন্তু হাত-পা বাঁধা থাকে। কাফেরদের থেকে যে নির্দেশ আসে সে তা-ই বাস্তবায়ন করে। কাজেই গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা যতদিন থাকবে ততদিন যত কিছুই করা হোক, দেশে শান্তি আসবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ক’দিন থাকবে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকতে পারে!
গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সহ¯্রাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাহাদাতের মর্তবা দান করুন। ত্রিশ হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়েছে। কিন্তু যে জুলুম ও বৈষম্য দূর করার জন্য তারা কুরবানী পেশ করেছে তা এখনো দূর হয়নি। এখনও এদেশে নানা আঙ্গিকে জুলুম ও বৈষম্য বিদ্যমান আছে এবং এখনও লুটতরাজ, জবরদখল চলমান আছে।
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছে। এরা যে কয়দিন থাকবে, আশা করা যায় দেশের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো থাকবে। এর একটা কারণ হলো, তারা ইলেকটেড নয় সিলেকটেড। অর্থাৎ এই সরকার ইসলামী না হলেও দায়িত্বশীল নির্ধারণের এই পদ্ধতিটা কিছুটা ইসলামী। কিছুটা ইসলামী এজন্য বললাম যে, তাদের সিলেকশন ইসলামী নিয়মমাফিক হয়নি। কারণ ইসলামী সিলেকশনের প্রধান শর্ত হলো, সিলেক্টেড ব্যক্তি এমন পাক্কা দীনদার হতে হবে, যার জীবনে কোনো মন্দ কাজে জড়িত হওয়ার কলঙ্ক নেই। বলুন, এখন যারা উপদেষ্টা হয়েছে তারা কি আল্লাহওয়ালা? পাক্কা দীনদার? তাদের জীবনে কি কোনো মন্দ ইতিহাস নেই? অর্থাৎ এদের সিলেকশনের ক্ষেত্রে এই প্রধান শর্তটিই দেখা হয়নি। তা সত্তে¡ও সিলেকশন অর্থাৎ ভালো লোক খুঁজে বের করে দায়িত্বে বসানোটা যেহেতু দায়িত্বশীল নির্ধারণের ইসলামী পদ্ধতি ( যদিও তার প্রধান শর্তই অনুসরণ করা হয়নি) সেহেতু এই মিলটুকু থাকার কারণেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আমরা হয়তো কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারব। কিন্তু যখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইলেকশন হয়ে দলীয় সরকার গঠন হবে তখন যেই লাউ সেই কদুই হয়ে যাবে। আমরা আবার ফিরে যাবো আগের পরিস্থিতিতে। এর কিছু আলামত এখনই শুরু হয়ে গেছে। আগের লোকেরা জনসাধারণের কাছ থেকে যে চাঁদাবাজি করত তা কিন্তু কমেনি; বরং হাত বদল হয়েছে মাত্র। আগে এক গ্রুপ নিত এখন আরেক গ্রুপ নিচ্ছে। তারা ক্ষমতায় গিয়ে যা করবে, ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তা শুরু করে দিয়েছে। আগের আর এদের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এরা একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। শুধু এই চাঁদাবাজিটা যদি বন্ধ করা যেত তাহলেই সব জিনিসের দাম অর্ধেকে নেমে আসত। পণ্যগুলো গ্রাম থেকে ঢাকায় ঢোকার আগ পর্যন্ত পথেই কয়েক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। আবার ঢাকায় ঢোকার পরও বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। এত এত জায়গায় চাঁদা দেওয়ার কারণে উৎপাদক পর্যায়ে যে পণ্যটার মূল্য ছিল বিশ টাকা, আড়তেই তার মূল্য হয়েছে ষাট টাকা। আর ভোক্তা পর্যায়ে সেটা বিক্রি হবে সত্তর বা আশি টাকায়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, পণ্যের প্রকৃত মূল্য বেশি ছিল না; চাঁদাবাজির কারণে মূল্য বেড়ে গেছে। বর্তমান উপদেষ্টাদের সম্ভবত চাঁদাবাজির সুযোগ নেই। কারণ যে পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজি করানো হতো সেই পুলিশই তেমনভাবে মাঠে নেই এবং উপদেষ্টাদের কোনো দলীয় লোকজনও নেই। এজন্যই বলেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আমরা হয়তো কিছুটা ভালো থাকবো।
গণতন্ত্র জনগণ শোষণের হাতিয়ার; কুরআন-সুন্নাহ গণতন্ত্রকে সমর্থন করে না
যাই হোক, আমরা সবাই শান্তি চাই; কিন্তু গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণে সেই শান্তি কোনোদিনই মিলবে না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পরিবর্তন করার জন্য যে কর্মপন্থা অবলম্বন করা দরকার আমরা তো সেটাও করছি না। যদি সুন্নাহসম্মত ব্যাপক দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণকে ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন শুরু করানো যায়, তাদেরকে আল্লাহ হুকুম ও নবীজীর তরীকার উপর ওঠানো যায় এবং ইসলামী হুকুমতের ফযীলত শুনিয়ে তাদের মধ্যে ইসলামী হুকুমতের চাহিদা তৈরি করা যায়, তাহলেই কেবল এদেশে ইসলামী বিপ্লব সাধিত হবে, গণতন্ত্র ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে এবং দেশে প্রকৃত শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বর্তমানে যে বিপ্লব হয়েছে তা মাতৃভ‚মি রক্ষার বিপ্লব; এই বিপ্লব তো ইসলাম কায়েমের জন্য হয়নি। দেখুন না, আফগানিস্তানে এখন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নেই; কিন্তু তারাই আজ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী। বিপরীতে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান জন্য জান দিয়ে দিচ্ছি, তবুও শান্তির দেখা মিলছে না। বস্তুত গণতন্ত্র হলো জনগণ শোষণের হাতিয়ার। এটা কাফেরদের তৈরী রাষ্ট্রব্যবস্থা। এর অধিকাংশ নীতিমালা কুরআন-হাদীসের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। উদাহরণত
গণতন্ত্র বলছে, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস।
আর কুরআন বলছে, أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا অর্থ: সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর জন্য। (সূরা বাকারা-১৬৫)
গণতন্ত্র অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অর্থাৎ এখানে অধিকাংশের মতামতকে ন্যায়-অন্যায় নির্ধারণের মাপকাঠি মনে করা হয়। পক্ষান্তরে কুরআন বলছে, وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ অর্থ: কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না। (সূরা আরাফ-১৮৭)
অন্যত্র বলছে, وَأَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ অর্থ: তাদের অধিকাংশ লোক বোঝে না। (সূরা মায়িদা-১০৩)
অন্যত্র বলছে, وإن تطع أكثر من في الأرض يضلوك عن سبيل الله অর্থ: আপনি যদি যমীনের অধিকাংশ লোকের কথা অনুসরণ করেন তাহলে তারা আপনাকে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তা থেকে বিচ্যুত করবে। (সূরা আন‘আম-১১৬)
তাছাড়া গণতন্ত্র যে অধিকাংশ লোকের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলে, বাস্তবে সেটাও মিথ্যা ও চরম ধোঁকাবাজি। উদাহরণত ১০০ ভোটের মধ্যে মধ্যে পাঁচজন প্রার্থীর তিনজন যদি ২০টি করে ভোট পায়, আর একজন পায় ১৯টি এবং আরেকজন পায় ২১টি। গণতন্ত্র বলবে, এই ২১ ভোট প্রাপ্তই সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বিজয়ী। অথচ বাস্তবে তার বিপক্ষে ভোট রয়েছে ৭৯টি। তাহলে ৭৯ ভোটের বিপরীতে ২১ ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি কিভাবে অধিকাংশ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে বিজয়ী হলো? পশ্চিমাদের আবিষ্কৃত এই গণতান্ত্রিক থিওরী যেমন ফালতু, তেমনি তাদের প্রণীত শিক্ষাসিলেবাসও ফালতু।
ইসলামী শিক্ষা দ্বারা চরিত্র গঠন হবে বৃটিশ সিলেবাসে নয়
মানব জীবনের একটি মৌলিক সম্পদ হলো আখলাক। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম আখলাকের প্রশংসা করে বলেছেন, إنك لعلى خلق عظيم (অর্থ) নিশ্চয় আপনি সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। (সূরা কলম-৪)
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী আর কেউ নেই। চাঁদাবাজি, ধোঁকাবাজি, দুর্নীতি ইত্যাদি কাজ করেছেন এমন কোনো রেকর্ড তার যিন্দেগীতে নেই, এমন কোনো কলঙ্ক তার চরিত্রে নেই। এজন্য আমাদেরকে নবীজীর উত্তম চরিত্র থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকেও তা শিক্ষা দিতে হবে। তাদের চরিত্র গঠনের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ- ইউনিভার্সিটিগুলোতে বৃটিশ সিলেবাস অনুযায়ী যে শিক্ষানীতি চালু রয়েছে, এই শিক্ষানীতি দ্বারা কি যুবক-যুবতীদের চরিত্র গঠন হচ্ছে? হচ্ছে না এবং এটা সম্ভবও নয়। আজ অধিকাংশ যুবক-যুবতী অবৈধ সম্পর্কে জড়িত। তবে যারা কোনোভাবে দীনের সাথে লেগে আছে, উলামায়ে কেরামের সাথে সম্পর্ক রাখে বা তাবলীগ জামাতের সাথে জুড়ে থাকে তাদের অধিকাংশ ঠিক আছে। তারা নিজেদের চরিত্র হেফাযত করতে পারছে। কিন্তু যারা দীনের সাথে সম্পর্ক রাখে না তারা চরিত্র হেফাযত করতে পারছে না; বরং অবৈধ সম্পর্কে ও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে।
অনেকে মনে করে যেহেতু ছেলে-মেয়েরা একসঙ্গে পড়াশোনা করছে তাই তারা একে অপরের হাত ধরে চলতে পারবে, আড্ডা দিতে পারবে, একসাথে ফুসকা, ফাস্টফুড খেতে পারবে। তাদের ধারণা, একসাথে পড়ে বলে এগুলো সব হালাল। আশ্চর্য লাগে, তাদের শিক্ষকগণও কি তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন না!? আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে যারা শিক্ষক ছিলেন, তারা ক্লাসের প্রত্যেকটা ছাত্র থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার হিসাব নিতেন। আদব-কায়দায় ত্রæটি দেখলে সংশোধন করে দিতেন। কিন্তু এখন এগুলোর কল্পনাও করা যায় না। বরং এখন যদি কোনো শিক্ষক এসব জিজ্ঞেস করে তাহলে হয়তো ঐ শিক্ষকের চাকুরিই থাকবে না। তাকে বলা হবে, তুমি মৌলবাদী হয়ে গেছো, জঙ্গি হয়ে গেছো, তোমাকে আর এই স্কুলে রাখা যাবে না। পুরো যুবসমাজ আজ পাপকর্ম ও নেশার সাথে জড়িত। এর দ্বারা জীবনের মূল্যবান সম্পদ চরিত্র ধ্বংস হচ্ছে।
মেয়েদেরকে মূল্যায়ন করা হয় সতীত্ব রক্ষা দ্বারা। কিন্তু বৃটিশ সিলেবাসে কি সতীত্ব রক্ষার কোনো পাঠ রয়েছে? নেই। থাকলে তো আমাদের দেশে আর সহশিক্ষা থাকতো না এবং মেয়েরাও বয়ফ্রেন্ডের কাছে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতো না। ইসলামে বয়ফ্রেন্ড, গালফ্রেন্ড বলে কিছু নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে বয়ফ্রেন্ড হলো সুযোগসন্ধানী ব্যভিচারী, আর গার্লফ্রেন্ড হলো সুযোগসন্ধানী পতিতা। এগুলো সব পশ্চিমা কালচার, ইসলামবিরোধী ও চরিত্র বিধ্বংসী।
উপদেষ্টাগণ তিনটি কাজ করলে দেশে কিছুটা শান্তি আসবে
উপদেষ্টারা বলেছেন, আপনারা আমাদেরকে ভুল ধরিয়ে দিন; আমরা সংশোধন করে নিবো। সে হিসেবে বলছি, আমাদের যুবক-যুবতীদের চরিত্র ধ্বংস হচ্ছে। সমাজে মারামারি কাটাকাটি হচ্ছে। তাই এগুলো বন্ধ করার জন্য কয়েকটি পরামর্শ দিচ্ছি। আপনারা এগুলো বাস্তবায়ন করুন। আর যাদের সুযোগ রয়েছে, তারা এই কথাগুলো উপদেষ্টাদের কাছে পৌঁছে দিন।
১ম কাজ: ছেলে-মেয়েদেরকে ইসলামী শিক্ষা দিতে হবে
যতটুকু ইলম অর্জন করা ফরযে আইন, প্রত্যেকটা ছেলে-মেয়েকে ততটুকু দীনী ইলম শিক্ষা দিতে হবে। এর ব্যবস্থা করা পিতা-মাতার উপর ফরয। অনুরূপভাবে স্ত্রীকে দীন শিক্ষা দেওয়া স্বামীর উপর ফরয। সন্তানের জন্যও পিতা-মাতাকে দীন শিক্ষা দেওয়া ফরয। এক যামানায় পিতা-মাতা শিখাবে, আরেক যামানায় স্বামী শিখাবে, তারপর ছেলে-মেয়ে যখন বড় হয়ে ইলম শিখবে তখন আবার পিতা-মাতাকে শিখাবে। হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.-কে চিনে না এমন মুসলমান এদেশে নেই বললেই চলে। তাঁর পিতা আলেম ছিলেন না, কিন্তু আলেমদের সাথে উঠা-বসা করতেন। তিনি যখন ছেলেকে মাদরাসায় ভর্তি করানোর ইচ্ছা করলেন, সকল আত্মীয়-স্বজন বাধা দিল। তারা বলল, এই ছেলেকে স্কুলে পড়ালে নিশ্চিত সে ব্যারিস্টার হবে। তাঁর আব্বা মানলেন না। তিনি তাদেরকে বললেন, আমার ছেলে ব্যারিস্টার হবে না; বরং ব্যারিস্টাররাই সাওয়াবের আশায় আমার ছেলের জুতা সোজা করবে। যাই হোক, তাঁর পিতার একটা মাসআলা জানা ছিল না। জমি বন্ধক রেখে যে টাকা খাওয়া জায়েয নেই এটা তিনি জানতেন না। মাওলানা থানবী রহ. ছাত্র যামানায় যখন এই মাসআলা শিখেছেন, তিনি এসে বাবাকে বলেছেন যে, আব্বা! এটা তো নাজায়েয। তার বাবা তখনই মেনে নিয়েছেন। দেখুন, এখানে ছেলে পিতার ভুল সংশোধন করে দিচ্ছে। তাহলে একজন মেয়েÑ বাবা-মা, স্বামী ও ছেলে- মেয়ে তিনটি জায়গা থেকে ইলমে দীন পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন কোনো জায়গা থেকেই সে ইলম পাচ্ছে না। কাজেই উপদেষ্টাগণ দেশের প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কুরআন-সুন্নাহর ফরয পরিমাণ ইলম শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নিন।
২য় কাজ: সহশিক্ষা বন্ধ করতে হবে
সহশিক্ষা ইসলামে হারাম। এই বয়সে অনেক আবেগ থাকে। উঠতি বয়সে যে আবেগ থাকে এটা পরে আর থাকে না। পনেরো থেকে বিশ বছর, এটি প্রচন্ড শারীরিক উত্তেজনার সময়। এ সময় যদি অবাধ মেলামেশার সুযোগ থাকে তাহলে পাপকর্ম সংঘটিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে আমার কাছে বহু রিপোর্ট রয়েছে। আমি একজন মুফতী। আমার কাছে বহু মানুষ ফাতওয়া জানতে আসে। আমার কাছে এমন ঘটনার সমাধান চেয়েও প্রশ্ন এসেছে যে, ক্লাস সেভেন পড়ুয়া মেয়ে বিবাহ ছাড়াই গর্ভবতী হয়ে গেছে, করণীয় কী? আরও শুনুন, আমার এক বন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, সে তার মেয়েকে ক্লাস ফাইভের বেশি পড়াবে না; যাতে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত না হয়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ক্লাস থ্রিতে পড়া অবস্থায়ই এক ছেলের সাথে মেয়েটির সম্পর্ক হয়ে যায়। এগুলো গোপালভাঁড়ের আজগুবি কেচ্ছা নয়; বাস্তব ঘটনা এবং সহশিক্ষার বিষফল। বলুন, ক্লাস সেভেনের ছাত্রী যদি বিবাহ ছাড়াই গর্ভবতী হয়ে যায়, ক্লাস থ্রির বাচ্চাটি যদি অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সমাজ আজ কোথায় চলে গেছে!? সহশিক্ষার এই ব্যবস্থা মূলত বিদেশী এনজিওগুলো চালু করেছে। এই খাতে বিদেশী কাফেররা বড় অংকের টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে যে, যদি তোমরা সহশিক্ষার ব্যবস্থা চালু করতে পারো তাহলে এত কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হবে। যারা দেশ পরিচালনা করে তাদের মাথায় এতটুকু ঘিলুও নেই! এবং তারা একটুও চিন্তা করেনি যে, টাকা নিয়ে তো সহশিক্ষা চালু করলাম কিন্তু দেশের যুবক-যুবতীদের চরিত্রের কী হবে? দুঃখের বিষয় হলো, যারাই এদেশে এমপি-মন্ত্রী হয় তারা কেবল ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে; দেশ ও জনগণ বা যুবক-যুবতীদের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে না। শুনলাম, মন্ত্রীরা টাকা খেয়ে এই মর্মে কয়েকটি এনজিওর অনুমোদন দিয়েছে যে, তারা এদেশে এইডসের চিকিৎসা দিবে। কিন্তু এইডস রোগী না-পাওয়ায় তারা এখন সমকামিতা শিক্ষা দিচ্ছে। সমকামিতা ব্যাপক হলে যখন এইডসের রোগী পাওয়া যাবে, তখন তারা চিকিৎসা দিবে। এই এনজিওগুলো কোথায় কোথায় কাজ করছে মাসিক আলকাউসার পত্রিকায় তার তালিকাও দেওয়া হয়েছে। যেসব মন্ত্রী এগুলোর অনুমোদন দিয়েছে তাদের তো মৃত্যুদÐ দেওয়া দরকার। নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা জাতিকে ধ্বংস করছে। এনজিওদের এই হীন চক্রান্ত আমাদেরকে বুঝতে হবে। ছেলে-মেয়েদেরকে বোঝাতে হবে যে, সহশিক্ষা চরিত্র বিধ্বংসী। কাজেই সহশিক্ষা চলবে না। আলাদা পড়ো, পর্দা রক্ষা করে পড়ো। বিয়ের আগে কোনো ছেলে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্ক করতে পারবে না। সম্পর্ক করলে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি বরাদ্দ থাকবে; যেমন, দশ বছর কারাদÐ। উপদেষ্টাগণ যদি সহশিক্ষা বন্ধ করতে পারেন এবং ছেলে-মেয়েদের বিবাহপূর্ব সম্পর্কের শাস্তি হিসেবে কারাদÐের আইন পাস করতে, তাহলে এদেশে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হবে না। ইসলামে তো বিবাহপূর্ব ভালোবাসার অনুমোদনই নেই। তাহলে ভালোবাসা দিবস এলো কোত্থেকে? আমাদের ছেলে-মেয়েরা সহশিক্ষার সুযোগ নিয়েই এই নোংরা দিবস পালনের সুযোগ পাচ্ছে। কাজেই সহশিক্ষা বন্ধ করতে হবে। উপদেষ্টারা কি এসব নোংরামী বন্ধ করার ব্যাপারে সৎসাহস দেখাতে পারবেন?! আপনারা হিম্মত করে ছেলে ও মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পৃথক করে দিন। এতে সহশিক্ষা থাকবে না; যুবক-যুবতীদের চরিত্রও ব্যাপকভাবে নষ্ট হবে না।
৩য় কাজ: যুবক-যুবতীদেরকে সময়মত বিয়ে দিতে হবে
এনজিওরা টাকা-পয়সা দিয়ে একটা আইন পাস করিয়েছে যে, ‘আঠারো বছরের আগে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে সেটা বাল্যবিবাহ হবে। এটা কেমন আইন হলো? একটা মেয়ে বালেগা হয় ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সে। বালেগা হওয়া মানেই তো সে স্বামীর খেদমত করার উপযুক্ত হয়ে গেছে। সে সন্তান নেওয়ার উপযুক্ত হয়ে গেছে। তা না হলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে বালেগা বানালেন কেন? তো সর্বোচ্চ পনেরো বছরে বালেগা হচ্ছে কিন্তু আইনের কারণে আঠারো বছরের আগে বিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাহলে মাঝের তিন বছর সে কীভাবে কাটাবে? মাঝের তিন বছর তো সে খুব কষ্টে অতিবাহিত করবে। এটা তো শারীরিক চাহিদা। আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই মানুষকে তৈরি করেছেন। এই চাহিদা না থাকলে দুনিয়া আবাদ থাকবে না। তো মেয়েদের চাহিদা আসে পনেরো বছরে আর আইন পাস করা হয়েছে বাল্যবিবাহ হওয়ার কারণে আঠারোর আগে বিয়ে দেওয়া যাবে না। অথচ ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আরো আগে বিয়ে হলে সে পনেরো বছরে দু-একটা বাচ্চার মা হয়ে যেতো। যে বয়সে দু-একটা বাচ্চার মা হবে সেই বয়সকে বলা হচ্ছে বাল্য! এটা কেমন কথা হলো? এনজিওদের এসব আইন ঝেটিয়ে দূর করতে হবে। যে বিচারক এটা পাস করেছে তাকেও মৃত্যুদÐ দেওয়া উচিৎ। আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মেয়েদেরকে পনেরো বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। আমি নবীজীর একজন ক্ষুদ্র অনুসারী। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে চারটি মেয়ে দিয়েছেন। এনজিওদের খুশি করতে প্রবর্তিত সেই আইন উপেক্ষা করে আমি সবগুলো মেয়েকে পনেরো থেকে ষোলো বছরের মধ্যে-মধ্যে বিয়ে দিয়েছি। কারণ বিয়ে না দিলে তারা দুশ্চিন্তা করতে পারে, কাল্পনিকভাবে অনেক কিছু করতে পারে, কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। এই খবীস এনজিওগুলোকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দিন। ইয়াহুদী-নাসারাদের মদদপুষ্ট ও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকারী কোনো এনজিও এদেশে থাকতে পারবে না। এজন্য সকল বাবা-মাকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সন্তানের গতিবিধির প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আর শুরু থেকেই তাদের বয়সের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় বাবা-মা অবহেলা করে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে বা মাদরাসায় পাঠাতে বিলম্ব করে। এতে দেখা যায়, বিয়ের বয়স হওয়ার পরও তাদের পড়া- লেখা শেষ হয় না। তখন একাডেমিক শৃঙ্খলার কারণে বিয়ে করতে বিলম্ব হয়ে যায় এবং বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এজন্য পড়া-লেখার বয়সের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে, যেন সাবালক হওয়ার পর পড়া-লেখা শেষ করতে বিলম্ব না হয়। বরং দ্রুত পড়া-লেখা শেষ করে বিয়ে করতে পারে এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়। হাদীস শরীফে এসেছে
فإذا بلغ فليزوجه فإن بلغ ولم يزوجه فأصاب إثما، فإنما إثمه على أبيه
অর্থ: সন্তান যখন বালেগ হবে, বাবা-মা তাকে বিবাহ দিবে। যদি বালেগ হওয়ার পরও বিবাহ না দেয় আর সন্তান কোনো গোনাহে লিপ্ত হয় তাহলে তার গোনাহ বাবা-মার ওপর বর্তাবে। (শুআবুল ঈমান; হাদীস ৮২৯৯)
সুতরাং এই কয়েকটা কাজ করুন তাহলে যুবসমাজের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র হয়ে যাবে। স্কুল-কলেজে ইসলামী শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করুন তারপর সাইন্স ইত্যাদি শিক্ষা দিন। অর্থাৎ ইসলামী শিক্ষাই হবে মূল, আর বিজ্ঞান ইত্যাদি তার সাপোর্টে থাকবে। আজ পত্রিকায় একটা লেখার শিরোনাম দেখলাম, ‘বিজ্ঞান ভিত্তিক ধর্মশিক্ষা দেওয়া হবে’। তারা বিজ্ঞানকে মৌলিক বানিয়েছে। এটা ভুল। এই লোকগুলোর সঠিক আকল-বুদ্ধি নেই। লিখতে হতো, ‘কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়া হবে’। আমি একবার রমনাপার্কের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা গেটে লেখা দেখলাম, ‘এই পার্কে স্কুল ড্রেসে আপত্তিকর অবস্থান নিষিদ্ধ’। এর সরল অর্থ হলো, স্কুল ড্রেস না পরে সাধারণ ড্রেস পরে উল্টাপাল্টা কিছু করলে তাদের আপত্তি নেই! এটা যারা লিখেছে তাদের মাথায় কোনো ঘিলু নেই এবং এরা কোনো হক্কানী আলেমের সোহবতে যায়নি।
তাহলে তিনটি ফর্মূলা হলো
এক. ফরয ইলম বাধ্যতামূলক করতে হবে।
দুই. সহশিক্ষা বন্ধ করতে হবে।
তিন. সময়মত বিয়ে দিতে হবে।
বর্তমান উপদেষ্টারা যদি এই তিনটি বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারেন তাহলে দেশের সামাজিক ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল হবে। তরুণ-তরুণীদের চরিত্র হেফাযত হবে। তারা বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম থেকে বাঁচতে পারবে। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন না হলে দেশের কোনো লাভ হবে না। যে সরকারই আসবে শুধু মারামারি আর অশান্তিই হবে। যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশা আর অপকর্ম কিছুই বন্ধ হবে না। মনে রাখতে হবে, যেমনিভাবে নেককার, চরিত্রবান মহিলারা উম্মতের শ্রেষ্ঠ সম্পদ; তেমনি বদকার, চরিত্রহীন মহিলারা উম্মতের সবচেয়ে বড় ফেতনা। বনী ইসরাইলের প্রথম ফেতনা শুরু হয়েছিল মহিলা দ্বারা। হাদীসে এসেছে
فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ، فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
অর্থ: নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা দুনিয়া এবং মহিলাদের ফেতনা থেকে সতর্ক থেকো। কেননা বনী ইসরাইলের প্রথম ফেতনা হয়েছিল মহিলাঘটিত। (সহীহ মুসলিম; হাদীস ২৭৪২)
বনী ইসরাইলের ধারাবাহিকতা পৃথিবীতে দীর্ঘদিন বিদ্যমান ছিল। এদেরই মধ্যে অধিকাংশ নবীর আগমন ঘটেছে। কিন্তু সেই সমাজের ধ্বংস শুরু হয়েছে নারীঘটিত ফেতনার কারণে। মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা তীবী রহ. লিখেছেন, বনী ইসরাইলের প্রথম ফেতনা ছিল এইÑ জনৈক ব্যক্তি তার চাচার কাছে তার মেয়েকে (চাচাতো বোনকে) বিবাহ করার প্রস্তাব দেয়। চাচা এই প্রস্তাব নাকচ করে দিলে চাচাতো বোনকে বিবাহ করার জন্য সেই লোক তার চাচাকেই হত্যা করে ফেলে। (শরহে মিশকাত লিত্-তীবী ৭/২২৬১)
এজন্য বদকার ও চরিত্রহীন মহিলাদের ফেতনার ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের মেয়েরা যেন বদকার ও চরিত্রহীন হওয়ার সুযোগ না পায় সেই পথও বন্ধ করতে হবে। এর জন্য পিতা-মাতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং একনিষ্ঠভাবে দীনী কাজ আঞ্জাম দেওয়ার তাওফীক দিন। আমীন।
অনুলিখন: মাওলানা মীযানুর রহমান বিন সাঈদ
শিক্ষক: জামি‘আ ইবনে মাসঊদ রাযি,
বছিলা গার্ডেন সিটি, মুহাম্মাদপুর, ঢাকা।