প্রথম কথা

ইলম হলো আল্লাহর বিশেষ একটি গুণ। যার কিছু অংশ আল্লাহ মানুষের কল্যাণের জন্য দান করেছেন। ইলমের কারণেই মানুষ লাভ করে সর্বোচ্চ মর্যাদা। হাদীসে এসেছে, ‘ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে ইলম শেখে এবং শেখায়’। কুরআন হাদীসে বর্ণিত এই ইলমকেই বলা হয় ইলমে দীন; যেটাকে আমাদের পরিমণ্ডলে আমরা ‘দীনী শিক্ষা’র শিরোনামে পেশ করে থাকি।

একজন মানুষকে সুন্দর, পরিমার্জিত ও আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে দীনী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দুনিয়া ও আখেরাতের সামগ্রিক সফলতা পেতে হলে আমাদের আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলে আরাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক নির্দেশিত কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হবে এবং এর পুর্ণাঙ্গ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। প্রচলিত মানবরচিত পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করে মানুষ কখনোই নিজেদের জীবনের সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না।

ইংরেজ বেনিয়াদের ভারতবর্ষে আগমনের পূর্বে সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে মাদরাসাভিত্তিক দ্বীনী শিক্ষাব্যবস্থাই ব্যাপকভাবে চালু ছিলো। কিন্তু উপমহাদেশে ইংরেজ আধিপত্য কায়েম হওয়ার পরে তারা সেসব মাদরাসা বন্ধ করে দিয়ে পাশ্চাত্য ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ঈমান-আকীদা হরণের ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের প্রবর্তিত এই শিক্ষাব্যবস্থার বিষফল থেকে উপমহাদেশের সরল প্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার যথাযথ সংরক্ষণ এবং কুরআন সুন্নাহভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার যথাযথ পুনর্জাগরণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকা দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিদ্যাপীঠ ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’।
প্রতিষ্ঠাতাদের ইখলাস ও কুরবানীর বদৌলতে অতি অল্পসময়ের মধ্যে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান বিস্তার করে উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বেও। একসময় সেটি এধারার সকল মাদরাসার মূল কেন্দ্র ‘উম্মুল মাদারিস’ হিসেবে পরিগণিত হয়।
প্রায় দেড়শত বছর ধরে দারুল উলূম দেওবন্দ স্বীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অবিচল থেকে হাজারো মহাপুরুষের জন্ম দিয়েছেন যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের দেশের কওমী মাদরাসাসমূহ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দারুল উলূম দেওবন্দের পথ ও পন্থাকেই অনুসরণ করে যাচ্ছে।

জামি‘আর প্রতিষ্ঠাকাল ও অবস্থান

জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দের পাঠ্যক্রমানুসারে পরিচালিত একটি শীর্ষস্থানীয় বৃহত্তর ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঊনিশ শ’ আটাশি খৃস্টাব্দে মসজিদের নগরী ঢাকার মুহাম্মদপুরস্থ সাত মসজিদের কোল ঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত হয় জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া।
দুই হাজার এক খৃস্টাব্দে এক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির কারণে জামি‘আকে স্থানান্তর করা হয় আলী অ্যান্ড নূর রিয়েল এস্টেটের টিনশেডে। সেখানে সুদীর্ঘ বিশ বছর জামি‘আ রাহমানিয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দু’ হাজার একুশ খৃস্টাব্দে পুনরায় জামি‘আ তার মূল ভবনে ফিরে আসে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আবারো এক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির শিকার হয় এই জামি‘আ। সেজন্য আবারো এই ভবন ছেড়ে আসতে হয়।

এর আগে দু’হাজার দশ সালে জামি‘আ রাহমানিয়ার পরিচালনায় জামি‘আতুল আবরার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্যে বসিলা এলাকার স্বপ্নধারা হাউজিংয়ে প্রায় তিন বিঘা জায়গা কেনা হয়। সেখানে মসজিদুল আবরার ও কসরুল আশরাফ নামে ৬ তলা মসজিদ ও ১০ তলা মাদরাসা ভবন তৈরি করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জামি‘আ রাহমানিয়া ও জামি‘আতুল আবরারেও শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিলো। যা এখন শুধু জামি‘আতুল আবরারে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

জামি‘আর বর্তমান কার্যক্রম

জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া ধর্মীয় শিক্ষার নানা দিক সমন্বিত একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এর শিক্ষাক্রম শিশু থেকে শুরু করে দাওরায়ে হাদীস [মাস্টার্স] এবং উচ্চতর শিক্ষা ইফতা বিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্রমবিন্যস্ত শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে জামি‘আয় কুরআন, হাদীস, ফিকহ, উসুল, আকাইদ,আরবী-উর্দু-ফার্সিভাষা ও সাহিত্যের মৌলিক কিতাবাদী বিশদভাবে শিক্ষা দেয়া হয়। এছাড়াও বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, দর্শনসহ সমূদয় বিষয় প্রয়োজন পরিমাণ শিক্ষা দেয়া হয়। নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে আদর্শ ধর্মীয় নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জামি‘আয় প্রশিক্ষণমূলক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জামি‘আয় বর্তমানে চলমান কার্যক্রম সমূহকে তিনটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করা যায়

  • শিক্ষা ব্যবস্থা
  • প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচী
  • জনসেবামূলক কার্যক্রম

প্রতিটি পর্যায়ের বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হচ্ছে।

জামি‘আর শিক্ষা ব্যবস্থা

জামি‘আর শিক্ষা ব্যবস্থায় মোট ৮টি বিভাগ রয়েছে। প্রতিটি বিভাগের জন্যে আলাদা দায়িত্বশীল উস্তাদ রয়েছেন। নিম্নরূপ

১.মকতব-নাযেরা বিভাগ :

এই বিভাগে শিশু প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক নুরানি ট্রেনিং পদ্ধতিতে মাত্র এক বছরে পবিত্র কুরআন শরীফ সহীহ শুদ্ধভাবে পাঠদান করে আমপারা মুখস্থ করিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মাসায়িল, দুআ-কালাম ও অর্থ সহকারে ৪০টি হাদীস শেখানো হয়। তাছাড়া এ বিভাগে উযু-নামায ইত্যাদির বাস্তব প্রশিক্ষণসহ সহজ পদ্ধতিতে প্রাথমিক বাংলা, ইংরেজি ও গণিত শেখানো হয়।

২.হিফজ বিভাগ :

এই বিভাগে মকতব-নাযেরা সমাপ্তকারী ছাত্রদেরকে অনূর্ধ্ব তিন বছরে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ মুখস্থ করানো হয়। এরপর খতম শোনানোর মাধ্যমে এক বছরে হিফজকে পাকাপোক্ত করা হয়। পাশাপাশি তিলাওয়াত বিশুদ্ধ ও সুন্দর করার লক্ষ্যে দক্ষ কারী সাহেবের মাধ্যমে মশক করানো হয়। হিফজ সমাপনকারী ছাত্রদেরকে কিতাব বিভাগে ভর্তির জন্য প্রস্তুতিমূলক শিক্ষাও এ বিভাগে প্রদান করা হয়।

৩.কিতাব বিভাগ :

এটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাপনাসমৃদ্ধ একটি বিভাগ। এই বিভাগে মকতব-নাযেরা বা হিফজ শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদেরকে মোট ১০ বছরে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের চেষ্টা করা হয়। এসময়ে তাদেরকেÑ কুরআন, হাদীস, ফিকহ, তাফসীর, আকাইদ, আদব, নাহু, সরফ, বালাগাত, মানতিক, হিকমত, ফালসাফাহÑ ইত্যাদিসহ যাবতীয় ধর্মীয় বিষয়ে পূর্ণ পারদর্শী করে তোলার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয় এবং সর্বব্যাপী দ্বীনী খেদমত আঞ্জামদানের জন্য তাদেরকে দাওরায়ে হাদীস সমাপনের সনদ প্রদান করা হয়।

৪.তাফসীর বিভাগ:

কিতাব বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় তাকমীল জামা‘আতের শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের জন্য আত-তাখাসসুস ফিত তাফসীর বা ‘উচ্চতর তাফসীর গবেষণা বিভাগ’। এই বিভাগের ছাত্রদেরকে এক বছরে পূর্ণ কুরআন শরীফের বিশুদ্ধ তাফসীর অভিজ্ঞ উস্তাদদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষাদান করা হয়। তাফসীর সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তরও এ বিভাগ থেকে দেয়া হয়।

৫.ইফতা বিভাগ:

কিতাব বিভাগের সর্বোচ্চ পর্যায় তাকমীল জামা‘আতের শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের জন্য আত-তাখাসসুস ফিল-ফিকহ তথা ‘উচ্চতর ফিকহ গবেষণা বিভাগ’। দাওরায়ে হাদীসের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্ররা এই বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। তাদেরকে দুই বছর ব্যাপী যুগ সমস্যার সমাধানে সহীহ ফতোয়া প্রদানের অনুশীলন করানো হয়।

৬.উলূমুল হাদীস বিভাগ:

হাদীস শাস্ত্রের আলোচনা অনেক বিস্তৃত। এ শাস্ত্রে হাদীসের কিতাবসমূহের স্তরবিন্যাস, হাদীসের সূত্র ও বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা, বর্ণনাকারীর অবস্থা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এসব বিষয়েদিক নির্দেশনা গ্রহণ ও প্রদান একজন আলেমের জন্য সবসময়ই অত্যাবশ্যকীয়। এই প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ রেখে জামি‘আ কর্তৃপক্ষ দুই বছর মেয়াদী উলুমুল হাদীস বিভাগ চালু করেছে। সেই সাথে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে জামি‘আ কর্তৃপক্ষ এতদসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ও দূর্লভ কিতাবসমৃদ্ধ একটি মাকতাবা গড়ে তুলেছে। এ বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্যও দাওরায়ে হাদীসের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়া আবশ্যক।

৭.দাওয়া ও ইরশাদ বিভাগ:

তাকমীল জামা‘আতের শিক্ষা সমাপনকারী ছাত্রদের জন্য নববী দাওয়াতের উসুল ও আদাবের শিক্ষা এবং এর অনুশীলনের জন্য ‘আত-তাখাসসুস ফিদ্ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ’ বিভাগের গোড়াপত্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি তাফাক্কুহ ফিদ্দীন ও নিত্য নতুন ফেতনার মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান অর্জনও এ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।
এক বছর মেয়াদী এই বিভাগে ছাত্রদেরকে আকায়েদে ইসলাম, উসূলে দাওয়াহ, কাদিয়ানিয়্যাত, ঈসাইয়্যাত, শীঈয়্যাত, হিন্দুমত, মওদূদিয়্যাত, বেরেলবীয়্যাত, ইস্তিশরাক, গায়রে মুকাল্লিদিয়্যাত, হুজ্জিয়্যাতে ইসলাম, হুজ্জিয়্যাতে হাদীস, শানে রিসালাত, উসূলে মুনাযারা, আদাবুল ইখতেলাফ, ধর্মনিরপেক্ষতা, ইন্টারফেইথ, হিযবুত তওহীদ, তাসাউফ, নাস্তিক্যবাদ ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা প্রদানের চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি এ বিভাগে শিক্ষা সমাপনকারীদেরকে দেশের ফিৎনাকবলিত অঞ্চলসমূহে দাওয়াতের কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য বিশেষভাবে রাহনুমায়ী করা হয়।

৮.আরবী আদব বিভাগ:

কুরআন সুন্নাহর মৌলিক ভাষা আরবী হওয়ার কারণে এ ভাষা আয়ত্ত¡ করার পাশাপাশি এতে গভীর বুৎপত্তি অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। সেজন্যই জামি‘আয় নিয়মতান্ত্রিক আরবী ভাষা শেখানোর পাশাপাশি আরবী সাহিত্যের বিশেষায়িত জ্ঞান লাভের জন্য রাখা হয়েছে আরবী আদব বিভাগ। তাকমীল জামা‘আতের উত্তীর্ণ ছাত্রদের জন্য এক বছর মেয়াদী এই বিভাগে আরবী সাহিত্যে বিশেষায়িত জ্ঞান লাভ ও আধুনিক আরবী সম্পর্কে অবগতি অর্জনের জন্য অনুশীলন করানো হয়।

ছাত্রদের মানোন্নয়নে

জামি‘আর প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচী

ছাত্রদেরকে আদর্শ দ্বীনী সমাজসেবকরূপে গড়ে তোলতে শুধু ধারাবাহিক শিক্ষাক্রম যথেষ্ট নয়। বরং সেজন্যে প্রয়োজন নেসাবী তালীমের পাশাপাশি সময়পোযোগী প্রশিক্ষণধর্মী কার্যক্রম। সে লক্ষ্যে জামি‘আ বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

১. রাহমানিয়া খুদ্দামুল তালাবা

সিলেবাসভুক্ত ধারাবাহিক শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ছাত্রদের মেধাবিকাশ ও বহুমুখী জ্ঞানার্জনের লক্ষ্যে জামি‘আর প্রতিষ্ঠালগ্নেই আসাতিযায়ে কেরামের পরামর্শক্রমে বাছাইকৃত ছাত্রদের সমন্বয়ে একটি কাফেলার রূপ দেয়া হয়। ২০০১ সালে কাফেলাটি রাহমানিয়া খুদ্দামুত্ত¡লাবা নামে আত্মপ্রকাশ করে।
সম্পূর্ণ উস্তাদদের তত্ত¡াবধানে রাহমানিয়া খুদ্দমুত্ত্বলাবা ১৩ টি বিভাগে স্বীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিভাগগুলো হচ্ছে, দাওয়াত-তাবলীগ, দাওয়াতুল হক্ব, বক্তৃতা, পাঠাগার, আরবী-বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রকাশনা, দফতর, পরিবেশ, স্বাস্থসেবা, সাউন্ড সিস্টেম ও অর্থ বিভাগ। এর মধ্য থেকে কয়েকটির বিবরণ উল্লেখ করা হচ্ছে।

ছাত্র পাঠাগার : ইলম হাসিলের পরিধিকে বিস্তৃত করতে হলে পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি তথ্য ও তত্ত¡ সমৃদ্ধ, চরিত্রগঠনমূলক গ্রন্থ পাঠের বিকল্প নেই। সেজন্যেই রাহমানিয়া খুদ্দামুল তালাবা উদ্যোগে খুদ্দামুল তালাবা পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে নবীদের জীবনী, সীরাত, তাসাউফ, ইতিহাস, দর্শন ও ভ‚গোল সহ বিভিন্ন বিষয়ের বই রয়েছে। সেই সাথে এখানে ছাত্রদের জন্য দেশ-জাতির সমকালীন অবস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিখিত বহুতথ্যবহুল বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা রয়েছে। শিক্ষানুরাগী ছাত্ররা মৌলিক লেখাপড়ার অবসরে স্ব স্ব অভিরুচি অনুযায়ী সপ্তাহে দুইবার সেসব বই-পুস্তক সংগ্রহ করে যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়।

বক্তৃতা বিভাগ : কুরআন-হাদীসের জ্ঞানার্জনের পর সর্বসাধারণের মাঝে দ্বীনী দাওয়াত প্রদানের জন্য বাকশক্তির প্রয়োজন অপরিসীম। সেজন্যেই উস্তাদদের বিশেষ তত্বাবধানে ছাত্রদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক সাপ্তাহিক বক্তৃতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ছাত্ররা যুগোপযোগী বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনুশীলনমূলক বক্তৃতা প্রদান করে থাকে। বাংলা, আরবী, উর্দূ এই তিন ভাষায় ছাত্রদেরকে সুন্দর উপস্থাপনা, সাবলীল বর্ণনা-ভঙ্গির প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য এ বিভাগটি প্রতি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গ্রপে বিভক্ত হয়ে ছাত্ররা বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তিন সপ্তাহের বক্তৃতায় বিজয়ীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় মাসিক পর্ব। এরপর মাসিক পর্বগুলোর বাছাইকৃত বক্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় (ইজতিমাউল ইজতিমা‘আত) ‘চ‚ড়ান্ত বক্তৃতা পর্ব’। সব পর্বেই বিজয়ীদের জন্য থাকে পুরস্কারের আয়োজন।

দেয়ালিকা : দেশের সাহিত্যচর্চা বর্তমানে এক শ্রেণীর বুদ্ধিবেচা লোকের হাতে জিম্মি। পাশ্চাত্যমুখী বিকৃত রুচির এসব কলম ব্যবসায়ীর বিপরীতে ইসলামী সাহিত্যের স্বচ্ছ নির্মল জ্যোতি বিকিরণের লক্ষ্যে ছাত্রদেরকে যথাযথভাবে গড়ে তোলার জন্য লেখনীর উপর বিশেষ জোর দেয়া হয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখাপড়ার সাথে সাথে বাংলা ও আরবী ভাষায় পারদর্শীতার মাধ্যমে রুচিশীল সাহিত্যচর্চার জন্য ছাত্রদের উদ্যোগে আরবী ও বাংলা দেয়ালিকা বছরে দু’বার প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়।

পরিবেশ পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ: চিন্তাধারা, কার্যক্রম ও শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের জন্য পরিবেশ উন্নত হওয়া অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়। জামি‘আর পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পরিবেশ বিভাগের মাধ্যমে মাদরাসার আঙিনা, টয়লেট, গোসলখানা ও হাউজ সাফাইয়ের জন্য জামা‘আত ভিত্তিক কাজ বণ্টন করে দেয়া হয়। পাশাপাশি আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ঝুড়ি স্থাপন, শীতকালে গরম পানির ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য ফিল্টারের ব্যবস্থা, বাথরুমের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহÑ সহ জামি‘আর পরিবেশ সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্পন্ন রাখার যাবতীয় আয়োজন এ বিভাগ থেকে করা হয়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে ছাত্রদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। জামি‘আর অভ্যন্তরে বছরব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া অসুস্থ ছাত্রদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও যথাসম্ভব তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থাপনাও এ বিভাগ থেকেই করা হয়।

বিবিধ প্রশিক্ষণ : সামাজিক অবক্ষয়ের এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা হরণকারী সর্বপ্রকার বাতিল মুখোশ উন্মোচন করে তাদের সম্পর্কে বাস্তব সত্য তুলে ধরার জন্য ছাত্রদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ প্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে প্রাচীন ও সমকালীন ভ্রান্তবাদীদের আকীদা-বিশ্বাসের উপর অবগতি লাভ ও তার প্রতিকারের প্রশিক্ষণ স্বরূপ বিষয়ভিত্তিক নানাবিধ সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়।

২.তারবিয়াতি প্রশিক্ষণ


নেসাবী তালীমের পাশাপাশিজামি‘আর প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচীর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো ছাত্রদের জন্য তারবিয়াতি প্রশিক্ষণ। সেজন্যে দৈনন্দিন সকাল-বিকাল নিয়মিত আদাবুল মুআশারাত, এক মিনিটের মাদরাসা, কিতাবুল ঈমান ইত্যাদি কিতাব তালীম করা হয়। আয়োজন করা হয় মাসিক তারবিয়াতি জলসা। সপ্তাহে দু’দিন জামি‘আর প্রধান দু’জন মুরব্বী; মুফতী মনসূরুল হক দা. বা. এবং মাওলানা হিফজুর রহমান দা. বা. -এর ইসলাহি মজলিস হয়ে থাকে। ছাত্ররা নিজেদের নামায সহীহ করে জনসাধারণকেও যেন সহীহ পদ্ধতিতে হাতে-কলমে মশক করাতে পারে সেই জন্য প্রতি সপ্তাহে একবার সুন্নাত পদ্ধতিতে কুরআন তেলাওয়াত ও নামায আদায়ের আমলী মশক করানো হয়।

৩.আবনায়ে রাহমানিয়া গঠন


একটি দূরদর্শী দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার শিক্ষার্থীদেরকে কখনও সত্যিকারার্থে ফারেগ করে দেয়না। আপন লক্ষ্য বাস্তবায়নে কর্মী হিসাবে ময়দানে প্রেরণ করে মাত্র। সে হিসেবে একজন শিক্ষার্থীর কখনই প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার এবং প্রতিষ্ঠানেরও তাকে বিচ্ছিন্ন রাখার সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রতিষ্ঠানেরই একজন কর্মী ও সক্রিয় সদস্য। আসাতিযায়ে কেরাম নিয়াবতে নববীর মহান দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে পড়াশোনার একটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ‘সুযোগ’ করে দিয়ে থাকেন; ফারেগ বা বিচ্ছিন্ন করে দেন না। কেননা দায়িত্বের তাগিদে সন্তান ‘পরবাসী’ হলেও কখনও ‘পর’ হয়ে যায়না।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুই যুগেরও অধিক কাল ধরে প্রতিবছর জামি‘আ থেকে কর্মের ময়দানে যাচ্ছেন বহু সংখ্যক নায়েবে নবী। আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এমনকি বিদেশের মাটিতেও তাদের সফল পদচারণা। জামি‘আর এসকল মানস-সন্তানেরা যেন সবসময় আসাতিযায়ে কিরামের সাথে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়, সেলক্ষ্যে শিক্ষাসমাপনকারী ছাত্রদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘রাবেতায়ে আবনায়ে রাহমানিয়া’। জামি‘আর প্রধান দুই মুরব্বীর তত্ত্বাবধানে এবং মজলিসে শূরার পরিচালনায় রাবেতা ইতোমধ্যে প্রায় এক যুগ অতিক্রম করেছে। রাবেতার উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় দাওয়াতী সফরের আয়োজন করা হয়। দ্বীনী বিষয়াবলীর প্রচার-প্রসারে ‘দ্বিমাসিক রাবেতা’ বের হয়। তাছাড়া প্রতিবছর রাবেতার বার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করা হয় যাতে রাহমানিয়া থেকে শিক্ষাসমাপনকারী সকল ছাত্রকে দাওয়াত প্রদান করা হয়। সে সম্মেলনে সমকালীন এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

জামি‘আর জনসেবামূলক কার্যক্রম

ছাত্রদের তালীম-তারবিয়তের পাশাপাশি জামি‘আ জনসেবামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করে থাকে। এক্ষেত্রে দ্বীনী এবং দুনিয়াবী উভয় প্রকারের সেবার লক্ষ্যে জামি‘আয় বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে

১.ফাতাওয়া ও ফারায়িজ বিভাগ :

মানুষের জন্য সবর্বোত্তম সেবা হলো দ্বীনী সেবা। জনসাধারণের দ্বীনী সেবায় জামি‘আর ফাতওয়া বিভাগ থেকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অবস্থা/পরিস্থিতিতে সৃষ্ট যাবতীয় সমস্যার ইসলামী সমাধান প্রদান করা হয় এবং জনসাধারণের পেশকৃত মাসআলা-মাসায়িল সম্পর্কিত সব ধরণের প্রশ্নের শরঈ জবাব প্রদান করা হয়। এছাড়াও সময়োপযোগী শরীয়তসম্মত পন্থা নির্ণয়ে যাবতীয় গবেষণা করা হয়।
পাশাপাশি এ বিভাগ থেকে মৃত ব্যক্তির স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিসদের মধ্যে শরীয়তের বিধান মোতাবেক সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের রূপরেখা বর্ণনা করা হয়।


২.দাওয়াত ও তাবলীগ বিভাগ :

এ বিভাগের আওতায় ছাত্রদের ইসলামী যিন্দেগী গঠন ও জনসমাজে দ্বীনী দাওয়াত প্রদানের বাস্তব প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এ পর্যায়ে ছাত্রদেরকে তাবলীগী জামাতের সাথে সম্পৃক্ত করে অসংখ্য ছাত্র দ্বারা তাবলীগী কার্যক্রম আঞ্জাম দেয়া হয়। প্রতি ছুটিতে অসংখ্য ছাত্র তাবলীগী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় সময় লাগানোর জন্য বের হয়ে থাকে। প্রতি সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগানোর মাধ্যমে নিয়মিত সাপ্তাহিক তাবলীগী কর্মসূচী পালন করা হয়। প্রতিদিন আসরের পর ছাত্ররা দশ মিনিটের মেহনতের শিরোনামে জামি‘আর আশপাশে দীনের দাওয়াত নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। এসময়ে তারা এলাকার সাধারণ মানুষদের পেছনে মেহনতের পাশাপাশি পথশিশুদেরকে ইসলামের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ফিকির করে থাকে। এছাড়ও জামি‘আর শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে একজন শিক্ষককে প্রতি বছর তাবলীগে ‘সালে’ পাঠানো হয়ে থাকে।


৩.দাওয়াতুল হক বিভাগ:

জনসাধারণকে দ্বীনী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করার পর পূর্ণাঙ্গ দীনের উপর পরিচালনার জন্য জামি‘আর পক্ষ থেকে হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.-এর সিলসিলায় শাহ আবরারুল হক রহ. পরিচালিত মজলিসে দাওয়াতুল হকের কর্মসূচী সূচারুরূপে আঞ্জাম দেয়া হয়। সে লক্ষ্যে প্রতি ইংরেজী মাসের তৃতীয় শুক্রবার সকালে মাসিক জলসার আয়োজন করা হয়। ছাত্ররা প্রতি ছুটিতে জনসাধারণকে দ্বীন শেখানোর জন্য নিজ এলাকায় বিভিন্ন মজলিসের আয়োজন করে থাকে।

৪.এলাকাবাসীর জন্য দীন শিক্ষার ব্যবস্থা


জামি‘আয় এলাকাবাসীর জন্য রয়েছে কুরআনী মক্তব। সম্পূর্ণ বিনা খরচে এলাকাবাসীকে এখানে কুরআনের সহীহ তেলাওয়াত ও দ্বীনী মাসআলা মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া হয়। পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের জন্যও পৃথক ব্যবস্থা রয়েছে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
এ ধারাবাহিকতায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বয়স্ক ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে কুরআন ও দীনীয়াত শিক্ষার ব্যবস্থার পকিল্পনা রয়েছে। এতে সব বয়সের মানুষ যে কোনো সময় জামি‘আয় এসে কুরআন ও দীনের জরুরী ইলম শিক্ষা করার সুযোগ পাবেন, ইনশাআল্লাহ।


৫.দ্বীনী কিতাব রচনা:

তাবলীগ ও দাওয়াতুল হকের পাশাপাশি দ্বীনী দাওয়াতের জন্যে রয়েছে জামি‘আর রচনা ও প্রকাশনা বিভাগ। এ বিভাগ থেকে দীনের জরুরী বিষয়াবলী সমৃদ্ধ অসংখ্য বই-পুস্তক প্রকাশ করা হয়েছে। জামি‘আর প্রধান মুফতী, মুফতী মনসূরুল হক দা. বা. -এর প্রস্তুতকৃত কিতাবের সংখ্যাই প্রায় অর্ধশত। সেসব কিতাব জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এছাড়াও জামি‘আর উস্তাদগণের মধ্য থেকে মুফতী ইবরাহীম হাসান সাহেব, মুফতী মীযানুর রহমান কাসেমী সাহেব , মাওলানা হাসান সিদ্দীক সাহেব ও মাওলানা উমর ফারুক সাহেব প্রমুখের শতাধিক রচনার মাধ্যমেও দেশ ও দেশের বাইরের বাংলাভাষী মুসলমানদের প্রভ‚ত দ্বীনী ফায়দা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতেও জামি‘আর দ্বীনী দাওয়াত প্রচারিত হয়ে থাকে।


৬.তাফসীর ও ওয়াজ মাহফিল :

জামি‘আর আসাতিযায়ে কিরাম ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমেও জনসাধারণের দ্বীনী সেবা প্রদান করে থাকেন। এ উপলক্ষে তাঁরা বিভিন্ন ছুটিতে ও সবক বন্ধের সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বার্থহীনভাবে ছুটে যান। এর পাশাপাশি জামি‘আর যে সকল উস্তাদ ঢাকার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম হিসাবে দায়িত্বরত আছেন; প্রায় সকলেই নিজ নিজ মসজিদে সাপ্তাহিক তাফসীর মজলিসের আয়োজন করে থাকেন। এ ধরনের মাহফিল-মজলিস কখনো ব্যক্তি উদ্যোগে, কখনো জামি‘আর পক্ষ হতে আবার কখনো রাবেতা পরিবারের আয়োজনে সারাবছরই হয়ে থাকে।


৭. প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসম্পন্ন দীনী মাদরাসা স্থাপন:


কওমী মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে যারা অবগত আছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন উপমহাদেশের মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, তাহযীব ও তামাদ্দুনকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা এবং জনগণের দীনী সকল চাহিদা পূরণ জন্যই মূলত এ শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করা হয়েছিল। আমাদের বাংলাদেশে অবস্থিত হাজার হাজার কওমী মাদরাসা সমূহ এই মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই চেষ্টা করে যাচ্ছে।
কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছেÑ উপর্যুক্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সক্ষম মানসম্পন্ন মাদরাসার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও পার্বত্য অঞ্চলসমূহে এ ধরনের মাদরাসা নেই বললেই চলে। বরং রাজধানী ঢাকা বা বিভাগীয় শহর সমূহই এখন দেশের গ্রহণযোগ্য অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের খেদমতের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
অথচ দেশের এসব অবহেলিত অঞ্চলে মানসম্পন্ন গ্রহণযোগ্য দীনী প্রতিষ্ঠান থাকার প্রয়োজনীতা ছিল আরো বেশি। কারণ এসকল অঞ্চলের মানুষের দীনী চাহিদা পূরণ না হওয়ায় তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রকার বাতিল মতবাদ, ষড়যন্ত্র ও দেশবিরোধী অপতৎতপরতার শিকারে পরিণত হচ্ছে। পাশাপাশি দারিদ্র ও মূর্খতার কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে নিজেদের মূল্যবান ঈমান পর্যন্ত বিসর্জন দিচ্ছে।
সেজন্যই জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া কর্তৃপক্ষ দেশের অহেলিত ও ফিৎনাকবলিত জনপদে কুরআন সুন্নাহর সহীহ তা’লীম তাবলীগের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমান-আমল হেফাজত করার জন্য মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। স্থানীয় জনগণের সাথে সমন্বয় করে এসকল মাদরাসার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা জামি‘আর পক্ষ থেকেই করা হবে।
বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় ‘সিয়ানাতুল মুসলেমীন, বাংলাদেশ’ নামে একটি নির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট সহ আরো কয়েকটি স্থানে মাদরাসা স্থাপনপূর্বক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।


৮.তাহযীবুল মাদারিস গঠন:


জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া দেশের শীর্ষ দীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় সারাদেশের অসংখ্য মাদরাসা এখানকার মুরব্বীদের নির্দেশনা ও পরামর্শে নিজেদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকে। সেসব মাদরাসার তা’লীম ও তারবিয়তের উন্নয়নের জন্য জামি‘আর মুরব্বী আসাতিযায়ে কেরাম প্রায়শই সেগুলোতে গমন করে থাকেন। জামি‘আর পরামর্শে পরিচালিত এসব মাদরাসার দায়িত্বশীলদের অনুরোধে বিষয়টিকে আরো গতিশীল করার জন্য একে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অতঃপর ১৪৪২ হিজরী মুতাবিক ২০২১ সালে ‘তাহযীবুল মাদারিসিল কওমিয়া, বাংলাদেশ’ নামে একটি শিক্ষাবোর্ড গঠন করা হয়। যার প্রধান লক্ষ্য হলোÑ জামি‘আ ও জামি‘আর পরামর্শে পরিচালিত এসব মাদরাসার ছাত্রদের তালীম-তারবিয়তের মানকে উন্নত করা এবং তাদের চিন্তা চেতনার উৎকর্ষ সাধন করা। এই বোর্ডে এ পযন্ত তিরিশের অধিক প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভ‚ক্ত হয়েছে।
কওমী মাদরাসার জাতীয় শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ায় তত্ত¡াবধানে যে সকল বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সেগুলোর বাইরে বিভিন্ন মৌলিক বিষয় ও কিতাবের পরীক্ষা বর্তমানে তাহযীবুল মাদারিসিল কওমিয়া, বাংলাদেশ’ -এর অধীনে গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ছাত্রদের মান উন্নয়নের জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।


৯.দুস্থ মানবতার সেবা :

দ্বীনী সহযোগিতার পাশাপাশি জামি‘আ বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবার দায়িত্বও সূচারুরূপে পালন করে থাকে। সেলক্ষ্যে জামি‘আর পার্শ্ববর্তী এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষদের মাঝে যথাসম্ভব সাহায্য প্রদান করা হয়। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সহ বিভিন্ন দূর্যোগে জামি‘আর কাফেলা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যায়। রোহিঙ্গা সংকটের চরমতম সময়ে জামি‘আর পক্ষ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার অনুদান পৌঁছানো হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ মসজিদ-মাদরাসা স্থাপন করা হয়েছে বিশের অধিক। জামি‘আর জনসেবামূলক কার্যক্রমকে আরো ব্যাপক করে তুলতে গঠন করা হয়েছে ‘আল-আবরার সেবা সংস্থা’। সম্প্রতি ২০২৪ সালের ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানেও জামি‘আর ছাত্ররা ব্যাপকভাবে সেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছে। এছাড়াও জামি‘আর নির্দেশনায় প্রতি ছুটিতে ছাত্ররা নিজ নিজ এলাকায় জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লিখিত বহুমুখী ব্যবস্থাপনা ও অসংখ্য স্বপ্ন নিয়ে জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া নিরন্তর এগিয়ে চলছে। এই পথচলায় জামি‘আ আপনার মূল্যবান মতামত, সুপরামর্শ ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।

Scroll to Top