জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার খুবই ব্যস্ততম এলাকা মুহাম্মাদপুরের ঐতিহাসিক সাত মসজিদকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা।
দেওবন্দ মাদরাসার এক দীর্ঘ সময়ব্যাপি অধিষ্ঠিত শাইখুল হাদীস সাইয়্যিদ হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর বিশিষ্ট ছাত্র এবং তাঁর বিশিষ্ট খলীফা মাওলানা হাবীবুর রহমান শায়েখে রায়পুরী রহ. এর খলীফা হযরত মাওলানা নূরুদ্দিন গাওহারপুরী রহ.। মাওলানা নূরুদ্দিন গাওহারপুরী রহ. লম্বা সময় কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন।
হযরত মাওলানা নূরুদ্দিন গাওহারপুরী রহ. এর নির্দেশে তাঁর প্রান প্রিয় মুরীদ জনাব মোহাম্মাদ আলী সাহেব এবং তার ভাই এই জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য দুই ধাপে ১৬ কাঠা জায়গা (ওয়াকফ) দান করেন। এভাবেই ১৯৮৮ সালে জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলতঃ এই মাদরাসার গোড়াপত্তন হয় মুহাম্মাদপুর (মোহাম্মাদী হাউসিং) থেকে ১৯৮৬ সালে।
মুহাম্মাদপুর (মোহাম্মাদী হাউসিং) থেকে চলে এসে তৎকালীন উচ্চপদস্থ মুহাদ্দিসীনদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা পরিচালিত হয়ে আসছে। উক্ত মাদরাসার মুরুব্বি হিসেবে ছিলেন শাইখুল হাদীস আল্লামা আযীযুল হক সাহেব রহ. এবং পরিচালকগণদের মধ্যে অন্যতম হলেন হযরত মুহিউস সুন্নাহ শাহ সাইয়্যিদ আবরারুল হক রহ. এর বিশিষ্ট খলীফা ও জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার প্রধান মুফতী ও শাইখুল হাদীস হযরত মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা.।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় গত ২০টি বছরের অধিক সময় ধরে মাদরাসাটি কিছু অসাধু লোকের জবরদখলে ছিল। মাদরাসার মোতাওয়াল্লি সহ মূল কমিটির সকলকে এমনকি হযরত মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. সহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে এ যাবৎ যত উস্তাদ মাদরাসার কল্যাণে জান-তর মেহনত করেছেন এবং ছাত্রদের সকলকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
এদের এহেন জুলুমের কারণে জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা কমিটি ও এই মাদরাসার উস্তাদ-ছাত্রগণ দীন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যম মাদরাসার প্রতিষ্ঠার মেহনতকে থামিয়ে রাখেন নি। মজলুমের মতো একটি ভাড়া করা টিনের ঘরে চালিয়েছেন তাবলীগ, তা‘লিম আর তাযকিয়ার মতো দীনী মেহনত। আর এই অন্যায়ের বিচার চেয়ে আবেদন করা হয় আদালতে। প্রতিবারই আদালত দুষ্ট লোকের জবরদখলকে অন্যায় বলে ফায়সালা দিলেও আজ অবধি এই মাদরাসার মূল হকদারদের হাতে তুলে দিতে পারেনি। দীর্ঘ ২০ বছর যাবত মহান আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের দরবারে বিশাল আশা নিয়ে জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার আসল হকদারগণ দু‘আ করে যাচ্ছিলেন যেন তিনি এই মাদরাসাকে জবরদখলকারীদের হাত থেকে রক্ষা করে আসল হক্বদারদের নিকট ফিরিয়ে দেন।
প্রায় ২০ বছর পর আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানীতে ৮ই যিলহজ্জ, ১৪৪২ হিজরী মুতাবিক ১৯শে জুলাই, ২০২১ ঈসায়ী তারিখ রোজ সোমবার এই জামি‘আর আসল হক্বদারগণ তাদের মাদরাসা বুঝে পান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আবারো এক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির শিকার হয় এই জামি‘আ। সেজন্য আবারো এই ভবন ছেড়ে আসতে হয়।
এর আগে দু’হাজার দশ সালে জামি‘আ রাহমানিয়ার পরিচালনায় জামি‘আতুল আবরার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্যে বসিলা এলাকার স্বপ্নধারা হাউজিংয়ে প্রায় তিন বিঘা জায়গা কেনা হয়। সেখানে মসজিদুল আবরার ও কসরুল আশরাফ নামে ৬ তলা মসজিদ ও ১০ তলা মাদরাসা ভবন তৈরি করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জামি‘আ রাহমানিয়া ও জামি‘আতুল আবরারেও শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিলো। যা এখন শুধু জামি‘আতুল আবরারে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
প্রথম কথা
ইলম হলো আল্লাহর বিশেষ একটি গুণ। যার কিছু অংশ আল্লাহ মানুষের কল্যাণের জন্য দান করেছেন। ইলমের কারণেই মানুষ লাভ করে সর্বোচ্চ মর্যাদা। হাদীসে এসেছে, ‘ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে ইলম শেখে এবং শেখায়’। কুরআন হাদীসে বর্ণিত এই ইলমকেই বলা হয় ইলমে দীন; যেটাকে আমাদের পরিমণ্ডলে আমরা ‘দীনী শিক্ষা’র শিরোনামে পেশ করে থাকি।
একজন মানুষকে সুন্দর, পরিমার্জিত ও আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে দীনী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দুনিয়া ও আখেরাতের সামগ্রিক সফলতা পেতে হলে আমাদের আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূলে আরাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক নির্দেশিত কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হবে এবং এর পুর্ণাঙ্গ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। প্রচলিত মানবরচিত পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করে মানুষ কখনোই নিজেদের জীবনের সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারবে না।
ইংরেজ বেনিয়াদের ভারতবর্ষে আগমনের পূর্বে সমগ্র উপমহাদেশ জুড়ে মাদরাসাভিত্তিক দ্বীনী শিক্ষাব্যবস্থাই ব্যাপকভাবে চালু ছিলো। কিন্তু উপমহাদেশে ইংরেজ আধিপত্য কায়েম হওয়ার পরে তারা সেসব মাদরাসা বন্ধ করে দিয়ে পাশ্চাত্য ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ঈমান-আকীদা হরণের ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের প্রবর্তিত এই শিক্ষাব্যবস্থার বিষফল থেকে উপমহাদেশের সরল প্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার যথাযথ সংরক্ষণ এবং কুরআন সুন্নাহভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার যথাযথ পুনর্জাগরণের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার প্রত্যন্ত এলাকা দেওবন্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিদ্যাপীঠ ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’।
প্রতিষ্ঠাতাদের ইখলাস ও কুরবানীর বদৌলতে অতি অল্পসময়ের মধ্যে কুরআন-হাদীসের জ্ঞান বিস্তার করে উপমহাদেশের সীমানা পেরিয়ে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বেও। একসময় সেটি এধারার সকল মাদরাসার মূল কেন্দ্র ‘উম্মুল মাদারিস’ হিসেবে পরিগণিত হয়।
প্রায় দেড়শত বছর ধরে দারুল উলূম দেওবন্দ স্বীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে অবিচল থেকে হাজারো মহাপুরুষের জন্ম দিয়েছেন যাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের দেশের কওমী মাদরাসাসমূহ কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দারুল উলূম দেওবন্দের পথ ও পন্থাকেই অনুসরণ করে যাচ্ছে।
জামি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া দখলের সম্পূর্ণ ইতিহাস
লেখা পড়ার জন্য নিচে প্রতিটি চ্যাপ্টার লিংক করে দেওয়া হল।